ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

টিপুর তৈরি ‘তারা দুর্গ’, যেন এক মরণফাঁদ!

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

চারপাশে গভীর অরণ্য এর মাঝখানেই রয়েছে একটি তারা। অতি মনোহর এক দৃশ্য। ঠিক যেমন মাটি থেকে আকাশের দিকে তাকালেই রাতে তারার দেখা মেলে। ঠিক তেমনি আকাশ থেকে মাটির দিকে তাকালেও দেখতে পাবেন একটি তারা। যা আরব সাগর দুর্গ থেকেও দেখা যায়।

বলছি, টিপু সুলতানের তৈরি তারার ন্যায় একটি দুর্গ। তার সৈন্যবাহিনী ও যুদ্ধাস্ত্র লুকিয়ে রাখা হত তারা দুর্গে। ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় চার ঘণ্টার পথ কর্ণাটক। সেখানেই রয়েছে আঠারো শতকের এই দুর্গটি। যা ভারতের ফরাসি-সামরিক স্থাপত্যের এক দুর্দান্ত নিদর্শন। দুর্গের নাম মঞ্জারাবাদ। আট কোণাযুক্ত দুর্গটি তারা আকৃতির। এটি ১৭৯০ সালে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান পাহাড়ের উপর তৈরি করেছিলেন।

 

তারা দুর্গ

তারা দুর্গ

মঞ্জারাবাদ অর্থ কুয়াশা। জনশ্রুতি রয়েছে, দুর্গটি নির্মাণের সময় উক্ত অঞ্চলটি ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল। আর টিপু সুলতান তাই এ দুর্গের নাম রেখেছিলেন মঞ্জারাবাদ দুর্গ। তবে অনেকে এটিকে তারা দুর্গ হিসেবেও জানেন। এ অঞ্চলটি একসময় বালাম পালেগারদের অধীনে ছিল। যাদের রাজধানী ছিল মণিনগাপুরায় (বর্তমান আইগুর)। 

১৬৯৯ সাল থেকে এ অঞ্চলটি ইক্কারির শিবা নায়কদের অধীনে ছিল। এরপর টিপু সুলতান মহীশূরের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে এ অঞ্চলটি নিজের করে নেন। টিপু সুলতান তার সম্পদ সম্প্রসারণ করতে মঙ্গোলোর বন্দর থেকে কুর্গ পর্যন্ত নিজের অধীনে নিয়ে আসেন। এরপরই তিনি এই পাহাড়ে নির্মাণ করেন তারা দুর্গ। 

 

তারার ন্যায় নকশা

তারার ন্যায় নকশা

এই দুর্গ গড়তে টিপু ফরাসি ইঞ্জিনিয়ারদের বেছে নেন। এসব ইঞ্জিনিয়াররা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী। এজন্যই তারা হাত মিলিয়েছিলেন টিপুর বাবা হায়দার আলীর সঙ্গে। এমনকি এই ফরাসি ইঞ্জিনিয়াররা টিপুর সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণেও অনেক সহায়তা করেছিলেন। এই দুর্গটি তারা আকৃতি হিসেবে তৈরি করার কারণ ছিল যুদ্ধের কাজে যেন সুবিধা হয়।

ইউরোপের তৎকালীন বিখ্যাত সামরিক প্রকৌশলী সেবাস্তিয়ান লে প্রেস্ট্রে দে ভোবান (১৬৩৩ থেকে ১৭০৭) এ দুর্গ নির্মাণে যুক্ত ছিলেন। তিনি ফরাসি রাজা লুই চতুর্দশ এর অধীনেও ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। দুর্গ নির্মাণকালে ফরাসিরা এর বিভিন্ন দেয়ালে ধনুক, তীর, বর্শা, তলোয়ার এমনকি কামানও লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা রাখেন। যাতে যে কোনো মুহূর্তে টিপুর সেন্যরা যুদ্ধ করতে পারে। তাই কামান ঠিকভাবে বসানোর জন্য দুর্গের দেয়ালের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে লম্বা ও পাতলা কোণা করে নির্মাণ করা হয়েছিল। 

 

বিশেষ কায়দায় নির্মাণ করা হয়েছে দুর্গটি

বিশেষ কায়দায় নির্মাণ করা হয়েছে দুর্গটি

দেয়ালগুলো থেকে অনুমান করা হয়, বিশেষ নকশার কারণেই সৈন্যরা দুর্গের কাছাকাছি আসা শত্রুদের ওপর গুলি চালাতে পারত। এর গোলাকার ঘাঁটিগুলো ছিল মৃত অঞ্চলের মতো। দুটি দুর্গের মাঝে একটি করে ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। বাইরে থেকে শত্রুরা বুঝতেই পারত না এমন জায়গা থেকে আক্রমণ আসতে পারে। পাথর এবং গুলি ছোড়ার সুবিধার্থে প্রাচীরগুলো তীর আকৃতির করা হয়েছিল। 

দুর্গটি নির্মাণ করা হয়েছিল বিশাল গ্রানাইট পাথর আর কাদামাটি দিয়ে। এ অঞ্চলটি তখন ঘন জঙ্গল ছিল। সেখানকার জলাশয়গুলোতে ছিল কুমির এবং বিষধর সাপের বসবাস। ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার এসব মাথায় রেখেই দুর্গের দেয়াল অলংকার করেন। দুর্গের ভেতরের ভবনগুলো ব্যবহার করা হত সেনা ব্যারাক, অস্ত্রাগার হিসেবে। যেগুলো তৈরি করা হয়েছে ইট দিয়ে। 

 

সৈন্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদে পরিপূর্ণ ছিল এই দুর্গ

সৈন্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদে পরিপূর্ণ ছিল এই দুর্গ

দুর্গের ভেতরে গানপাউডার সংরক্ষণের জন্য দুটি কক্ষ ছিল। যা গ্রীষ্মেও শীতল থাকত। এছাড়াও দুর্গের ঠিক জ্যামিতিক কেন্দ্রে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল ক্রস আকারের একটি ট্যাঙ্ক। দুর্গের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল দিকে খিলানযুক্ত কক্ষ ছিল। যেখানে রক্ষীরা বিশ্রামের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করত। এছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংরক্ষণের জন্যও ভূগর্ভস্থ বিশেষ কক্ষ ছিল।

টিপু সুলতান ছিলেন মহীশূরের শাসক। ২০ নভেম্বর ১৭৫০ সালে জন্ম নেয়া টিপুর পুরো নাম ফতেহ আলী সাহাব টিপু। তিনি তার বীরত্ব এবং শৌর্য বীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতাকামীতার জন্য ভারতের বীরপুত্র বলা হয়। টিপু সুলতান ১৭৯৯ সালের ৪ মে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে শ্রীরঙ্গপত্তনম যুদ্ধে নিহত হন।

 

যেন চোখ জুড়িয়ে যায় এ দৃশ্য

যেন চোখ জুড়িয়ে যায় এ দৃশ্য

টিপু সুলতানের উদ্ভাবনী চিন্তার এক অনন্য নিদর্শন এই মঞ্জারাবাদ দুর্গ। এছাড়াও টিপু সুলতানের আরেকটি উদ্ভাবন ছিল অ্যাংলো-মাইসোর যুদ্ধের সময় রকেট ব্যবহার করা। তখন পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রথম কোনো যুদ্ধের জন্য লোহায় মোড়ানো রকেট ব্যবহার করেছিল টিপুর সৈন্য বাহিনী। ব্রিটিশরা এই মাইসোরিয়ান রকেট দেখে এতোটাই বিচলিত হয়েছিল যে, তারা এই প্রযুক্তিটি ইউরোপে নিয়ে গিয়েছিল। 

এরপর ১৮১২ সালে তারা অ্যাংলো-আমেরিকান যুদ্ধে এই রকেটের একটি সংস্করণ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তার শাসনকালে তিনি তুন মুদ্রা ব্যবস্থা এবং ক্যালেন্ডার চালু করেছিলেন। পাশাপাশি একটি নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা যা মহীশূরের রেশম শিল্প বিকাশের সূচনা করেছিল। যখন মঞ্জারাবাদ দুর্গ নির্মাণ করা হয় তখন এটি ভারতে আরো একটি এমন ঘরানার দুর্গ ছিল। ১৭০০ এর শেষ দিকে মঞ্জারাবাদের আগেই কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম তারা আকৃতির একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন।

 

অসম্ভব সুন্দর এক দুর্গ

অসম্ভব সুন্দর এক দুর্গ

টিপু সুলতানের মঞ্জারাবাদ দুর্গটি কর্ণাটকের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে দেখা যায়, এই দুর্গ আজ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। যার খুব দ্রুতই সংস্কার এবং সংরক্ষণ প্রয়োজন। কারণ এটি আমাদের ইতিহাসের অনেক বড় একটি জায়গা দখল করে আছে। যা কালের বিবর্তনে আর অবহেলায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//