ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২২ ১৪৩১

  • || ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

শীত আসলেই মনে পড়ে যায় আমাদের শৈশবের হাজারও স্মৃতি

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮  

শীত ছিল আমাদের নিকটাত্মীয়ের মতো। অনুভূতির খুব কাছাকাছি এসে জড়ো হয়ে থাকত। তবে এই নিকটাত্মীয়কে বরং আশ্রয় না দিয়ে বিদায়ী সম্ভাষণ জানানোতেই বেশি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতাম! খুব সকালে ঘুম-কুয়াশার সকালে গাদা থেকে আঁটি আঁটি খড় জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে শীত পোহানোর যে কী মজা, শৈশবে কানায় কানায় তা উপভোগ্য করে তুলেছিলাম। আগুনের উত্তপ্ত ধোঁয়ার তাড়া খেয়ে কুয়াশার বরফ জমাট ধোঁয়ার চোরের মতো পিঠ বাঁচিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের চেয়ে আনন্দের দৃশ্য আর কয়টাই বা ছিল তখন? আগুনের চারপাশে একদিকে ঠকঠক করে কাঁপছি, অন্যদিকে আরও জমাট শীতের কামনা মনে মনে। কারণ, জমাট শীত ছাড়া আগুন পোহাতে মজা কম! শীত যত বেশি, আগুনের উত্তাপের ঘনিষ্ঠতা ততই নিকটতম, লেপ-কম্বলগুলো অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। অথচ শীত ছাড়া ওরাও অর্থহীন।
এখনো আমাদের এই শহরে শীত পড়ে। বরফরঙা কুয়াশায় ঘাড় নুইয়ে পরাজিতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে গাছগুলো, ঘাসগুলো। খুব ভোরে কোনো মাকড়সা জেগে উঠে হয়তো দেখে, তার পাতা জাল ভিজে সারা! ঘাসগুলোও সারারাত ভিজে ভিজে যেন কবিতাময় হয়ে থাকে। ঘাস ছুঁলেই শিহরিত অনুভূতিতে বের হয়ে আসবে একেকটা চমকানো কবিতা! তবে এসব কবিতা এখন আর শোনা হয় না। কর্মব্যস্ততার সিঁড়িতে পা রাখার পর থেকে আবেগের জায়গা কই। শীত আর অনুভূতির আবেগ—সে তো কোনো এক কাল্পনিক অগ্নিতাপে ধোঁয়া হয়ে ফেরারি হয়েছে কবেই!

শীত মানে বাগানের ফুলকপি-বাঁধাকপির পাতায় শিশির। ধনেপাতার মিহি চিকন শাখা-প্রশাখার মাথায় সাদা ফুল। গ্রামের বাড়িতে উঠোনে শুকনো সরষে গাছের পালায় আগুন জ্বালিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত আগুন পোহানো, আর তাতে মটরশুঁটি পুড়িয়ে খাওয়া। গ্রামের বাড়িতে পৌষ মাসে সারা রাত ঢেঁকিতে ঢ্যাম কুর কুর বাজনা বাজত, চাল কুটে সাদা আটা ভানা হচ্ছে, ভোরবেলা ফাঁপা পিঠা আর পুলি পিঠায় ভরে যাচ্ছে কাঁসার বাটি। খেজুরের রসের পিঠা, পায়েস—শীতে জমে সর পড়ে আছে ওপরে! আহ্!
আজকের ঢাকায় শীত কই? তবু এক কাপ চা হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই, কমলা রঙের রোদটা যদি পাই, জীবনানন্দ দাশ যে কমলা রঙের রোদ দেখেছিলেন। কিংবা কারও শিয়রে তিনি তো কমলার শুশ্রূষা হতে চেয়েছিলেন, তাও তো নিশ্চয়ই শীতেই।
‘আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর
করুণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত
মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।’
শীতে কিন্তু রোগশোক আসবেই। চামড়ায় চড়চড় টান, ছোটবেলায় গায়ে আঁচড় দিয়ে শুকনো মাটির মতো দাগ বের করে বলতাম, মানুষের শরীর মাটির তৈরি। এ থেকে রক্ষা পেতে পেট্রোলিয়াম জেলি ছোটবেলা থেকেই ছিল এক ধন্বন্তরি। ঠোঁটেও পেট্রোলিয়াম জেলি মাখতাম, আমরা বলতাম ‘শিশুমালতী’।
সরষের তেল মেখে রোদে গা গরম করে টিউবওয়েলের নিচে বসে গোসল করতাম, উত্তুরে হাওয়া এসে গায়ে লাগত, দাঁতে দাঁতে লেগে আওয়াজ হতো ঠকঠক, কাঁপতাম। শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে…শিবরাম চক্রবর্তী প্যারোডি করেছিলেন, শীতের হাওয়ায় লাগল কাঁপন নন্দলালের হাড়ে হাড়ে…আমাদেরও হাড়ে কাঁপন লাগত।
তখন তো মাথায় মাখতাম নারকেল তেল। তেল জমে থাকত বোতলে। পাটখড়ি (রংপুরে বলে সিন্টা) দিয়ে তেল বের করতে হতো, তা না হলে উঠোনের রোদে তেল গলাতে দিতাম।
এখন তো কত কিছু পাওয়া যায় শিশুদের আর নিজেদের সুস্থ আর সুন্দর রাখার জন্য। বেবি অয়েল, অলিভ অয়েল, ময়েশ্চারাইজার।
শীত আসে না আসে না করতে করতে একটা সময় শীত কিন্তু ঠিকই পড়বে।
হাড়কাঁপানো শীতই পড়বে। এবার নাকি শীতের মাত্রা তীব্রই হবে। রুম হিটারের দোকানেও ভিড় জমবে। শীতে বিয়ের ধুম তো এরই মধ্যে পড়ে গেছে। পিকনিকেও ছুটবে পিকনিক পার্টি। জারিসারি, পালাগানের আসর বসবে গ্রামেগঞ্জে। কক্সবাজারের মতো বিখ্যাত পর্যটন গন্তব্যগুলোয় ছুটবে অগুনতি ভ্রমণপিয়াসী। হোটেলগুলোয় রব উঠবে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই।
বাংলাদেশে শীতের প্রধান অসুবিধা হলো ধূলিবালি। গাছের পাতা পর্যন্ত ধূসরিত হয়ে থাকে। সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে নানান অসুখ-বিসুখ তো হাত বাড়াবেই।
তাহলে জীবনানন্দ দাশের কমলা হয়ে না হয় কারও শিয়রে মায়া হয়ে উষ্ণতা হয়ে থাকা যাবে। কিন্তু আরও ভালো হবে, যদি আপনি সুস্থই থাকেন। বরং বলি, এই শীতে ভালো থাকুন। যত্ন আর মমতার আশ্রয়ে থাকুন। ভালোবাসার ওমে থাকুন।
নাকি গাইব ভূপেন হাজারিকার গান: ‘রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই।’
সুকান্তের ভাষায়:
‘হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।’
তাহলে কথা গুছিয়ে আনি: আসুন, নিজে ভালো থাকি, স্বজনদের ভালো রাখি, আর ভালো রাখার জন্য একটুখানি উষ্ণতা নিয়ে হাত বাড়াই সমাজের পিছিয়ে পড়া শীতার্ত মানুষদের জন্য। শীত মানে তাই কাছে আসা। শীত মানে তাই একটুখানি উষ্ণতা বিনিময়। শীত মানে ভালোবাসায় ওম! ভালো থেকো, ভালোবাসা; এই শীতে, ভালো থেকো একজোড়া চায়ের কাপ থেকে ওঠা ভাপে।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//