ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

গ্যাং কালচার: ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোররা

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

গ্যাং কালচারের’ নামে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোররা। রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ছে এসব কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। শুধু রাজধানীতেই নয় দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের রাস্তা ঘাট ও পাড়া মহল্লায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং নামের উঠতি বয়সের স্কুল পড়ুয়া বখাটেরা। যাদের প্রত্যেকের বয়স আঠারো বছরের নিচে। আবার এদের নিজ নিজ দলের রয়েছে নানা সাংকেতিক নাম।

বর্তমান সময়ে রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, হাতিরঝিল, গুলশান, বনানী, খিলগাঁও, ধানমন্ডি, বারিধারাসহ প্রায় সব এলাকায় চলছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। এদের তৎপরতা কমাতে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিদিনই আটক করা হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, সিনিয়র অপরাধীদের চেয়ে অনেকটাই ভয়ানক হয়ে উঠছে কিশোররা। উঠতি বয়সী এই কিশোর গ্রুপ দেশজুড়ে রয়েছে এবং তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনার পর এসব কিশোরদের তৎপরতাকে রুখে দিতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু রাজধানীতেই আটক করা হয়েছে হাজারের বেশি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।

ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে দল তৈরি করা থেকেই এসব গ্রুপের সূচনা হয়। তাছাড়া মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার, দল বেঁধে বেড়ানো, মেয়েদের উত্যক্ত করা, ঝুঁকিপূর্ণ বাইক রাইডিং, অনলাইনে প্রতিপক্ষ তৈরি করা, ছিনতাই, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা থেকে শুরু করে খুন পর্যন্ত হচ্ছে এদের হাতে।

কিশোর গ্যাং নাইন স্টার গ্রুপের নাঈম হোসেন (ছদ্ধনাম) ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সে উত্তরায় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে জড়িয়ে পরে এই গ্যাংয়ের সঙ্গে। এই গ্যাংয়ের কাজ কি? জানতে চাই বলেন, এলাকায় রাজত্ব করা। স্কুল কলেজের পাশে আড্ডা দিলে অন্য ছেলে মেয়েরা দেখে ভয় পায়। এলাকা আমাদের কথায় ওঠে বসে। বাইক নিয়ে আমরা দাপিয়ে বেড়ায়। রাজনৈতিক বড় ভাইরা তাদের বিভিন্ন কাজে আমাদের ডাকে।

কিশোর গ্যাংয়ে কিভাবে এলেন আর পরিবার কি জানে কিনা এ বিষয়ে উত্তরার ডিস্কো বয়েজের সদস্য মারুফ বলেন, আমরা সমস্ত উত্তরা জুড়ে রাজত্ব করি, বন্ধুদের মাধ্যমে জড়িয়েছি। আমাদের বড় ভাইদের বিভিন্ন কাজে দল বেঁধে গিয়ে আমরা মারামারি, দখলবাজি করে থাকি। নেতাদের নাম জানতে চাইলে বলেন, নাম প্রকাশ করা যাবে না। আমার পরিবার আমাকে কোন দিনও কিছু বলেনা। তবে প্রথমে বলত।

নাইন এমএম গ্রুপের এক সদস্য বলেন, প্রথমে বাবা-মা বকাঝকা করত। এখন আর কিছু বলে না। আরো উল্টো পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের ঝামেলা হলে আমাকে বলে সমাধানের জন্য।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিরোইজম থেকেই কম বয়সী এসব কিশোররা নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। সমাজের চোখে হিরো হতে চায় ওরা। যার ফলে দলবল নিয়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করে। আর সেখান থেকেই সাহস সঞ্চয় করে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সন্তান গ্যাংয়ের সদস্য জানতে পারলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং পারিবারিক কিছু উদ্যোগের মাধ্যমেই তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিশোরদের গ্যাংয়ে জড়িত হওয়া ঠেকাতে অভিভাবকরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রকম ঘটনায় ছেলে-মেয়েদের টাকার চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে তাদের বাসায় ফেরার সময়সূচিরও ঠিক থাকে না। এই দুটি বিষয় দেখা গেলেই সতর্ক হওয়া উচিৎ।

এ বিষয়ে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, র‌্যাবের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অভিযানে আমি কিশোর গ্রুপের যে ছেলেদের পেয়েছি, তারা অধিকাংশই মাদকাসক্ত। তাদের মধ্যে একটা হিরোইজম কাজ করে। তারা ছিনতাই করে, কেউ দলবেঁধে নেশা করে, চাঁদা তোলে, স্থানীয় বড় ভাইদের নাম বলে এলাকা দাঁপিয়ে বেড়ায়। এদের অধিকাংশই নবম-দশম শ্রেণির ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি কিশোর গ্যাং সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাত মসজিদ এলাকায় ছুরিকাঘাতে মহসিন (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র স্থানীয় কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যের হাতে খুন হয়। নিহত মহসিন রিমঝিম কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিল বলে জানা গেছে।

এদিকে, রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় দক্ষিণখান থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

দক্ষিণখান থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই, ফায়দাবাদ চৌরাস্তা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়। দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা হয়েছিল। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। গ্রেফতারকৃতরা ওই মামলার পলাতক আসামি। এছাড়াও প্রতিদিন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ধরে যাচাই বাচাই করে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে গাজীপুরে ‘তুই’ করে বলায় চা বিক্রেতা এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে গাজীপুর জেলা শহরের রাজদীঘিরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গাজীপুর পুলিশ সূত্র জানায়, জেলার রাজদীঘিরপাড় এলাকায় গল্প করার সময় ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে নূর ইসলাম তার চেয়ে বয়সে বড় সাহাপাড়া এলাকার রানা নামের এক বন্ধুকে তুই বলে শাসালে কয়েকজন কিশোর উত্তেজিত হয়ে উঠে। এসময় তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে নূর ইসলাম দিঘীর পানিতে ঝাপ দেয়। পরে নূর ইসলামকে পানি থেকে তুলে এনে কয়েক কিশোর ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে কিশোর গ্যাং সম্পর্কে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল অভিভাবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, কিশোররা সন্ধ্যার পর কেনো বাইরে থাকবে? তারা পড়ার টেবিলে যাবে, সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে আসবে। এদের আমরা লক্ষ্য করছি অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকছে। অনুরোধ করব অভিভাবকদের, আপনার সন্তান কোথায় খোঁজ রাখুন। সন্তান কে কী করছে খেয়াল রাখুন।

কিশোর গ্যাং সম্পর্কে হাতিরঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজ আল ফারুক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাড়া-মহল্লায় উঠতি বয়সের ছেলেরা নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। তারা খুন-খারাপিতেও জড়িয়ে পড়ছে। যৌন হয়রানি এবং মাদকের সঙ্গে অনেকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এদের দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমি নিজেই কিশোর গ্যাং বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে একদিনে ১৫৩ জনকে আটক করেছিলাম। তবে যাচাই বাচায় শেষে ৮ জনের মত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেয়েছি। বাকিদের অভিবাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
 
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবীর হত্যার মধ্য দিয়ে পরিচিতি পায় কিশোর গ্যাং বিষয়টি। আদনান হত্যার পরেও ঘটে বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্খিত হত্যার ঘটনা।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//