ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চাকরিতে দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিণতি

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০১৯  

দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ সফলতার সোপান। আর সে যদি হয় কর্মজীবী তাহলে তো কোনো কথাই নেই। দক্ষতা আছে কিন্তু দায়িত্ববোধ নেই বা দায়িত্বশীল কিন্তু দক্ষ নয় তাহলে তার দ্বারা কাঙ্খিত উদ্দেশ্য কখনো হাসিল হবে না।

মহাগ্রন্থ আল কোরআন একজন শ্রমিকের কোন কোন গুণ থাকা দরকার সে আলোচনাও মানুষের জন্য করে দিয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায়, ইসলাম শুধু নির্দিষ্ট কিছু ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয় বরং মানব জীবনের প্রতিটি শাখা প্রশাখায় এর নির্দেশনা রয়েছে।আল কোরআনে শ্রমিকের গুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘নিশ্চয় আপনার জন্য উত্তম শ্রমিক হচ্ছে সে, যে দক্ষ ও বিশ্বস্ত।’ (সূরা কাসাস-২৬) কতো স্পষ্ট শব্দে বলে দেয়া হয়েছে। এ দুটি গুণ কোনো শ্রমিকের মাঝে থাকলে তার দ্বারা মালিকের মাল কখনো নষ্ট হবে না। মালিকের অনুপস্থিতিতে সে কাজে ফাঁকি দেবে না। মাল গায়েব করবে না। কোনো ক্ষেত্রেই ঠকানোর ধান্দা থাকবে না। বর্তমান কর্মচারীদের মাঝে এই দু’টিরই বড় অভাব। দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ নিজেরা নেয় না। যতটুকু আছে তাও কাজে লাগানো হচ্ছে না। আর দায়িত্ববোধ আসার জন্য শিক্ষা দরকার। সে শিক্ষাও সমাজ থেকে উধাও। তাই আমরা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। 

একজন কর্মচারির নিকট মালিকের মাল ও মালিকের জন্য বরাদ্দকৃত সময় উভয়টি আমানত। আমানত মানে হচ্ছে মালিক এগুলো তার কাছে পায়। অতএব এগুলো মালিকের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে হবে। এর মাঝে কোনো ধরনের গাফলতি খেয়ানতের শামিল। আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যেন আমানতকে তার প্রাপকের কাছ পৌঁছে দাও। আর মানুষের মাঝে কোনো ফয়সালা দিলে তা যেন ইনসাফপূর্ণ হয় সে নির্দেশও আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন।’ (সূরা নিসা-৫৮) 

কোরআন, হাদিস রিসার্চ করলে মানুষের নৈতিক শক্তির যে সব উৎস বের হয়ে আসে এর মাঝে একটি হচ্ছে যথাযথভাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে আমানতকে রক্ষা করা। যার মাঝে এই গুণ নেই সে কখনো দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। সর্বক্ষণ তার মাঝে মানসিক দুর্বলতা কাজ করবে। আমানত সম্পর্কে রাসূল (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘যার আমানতদারি ঠিক নেই তার ঈমান নেই আর যার ওয়াদা ঠিক নেই তার মাঝে কোনো দীনদারি নেই।’ তাই কোনো দায়িত্ব থাকলে তাতে যদি অবহেলা হয় তাহলে সে ব্যক্তি কখনো ঈমানদার, দ্বীনদার হতে পারবে না। কোরআন, হাদিসের এসব বাণী দ্বারা মূলত মানুষকে তার দায়িত্ব পালনে গুরুত্বারোপ করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনে গাফলতি দ্বারা মালিককে ধোঁকা দেয়া হয়। আর ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, যে মানুষকে ধোঁকা দেবে সে উম্মতে মুহাম্মাদির দলভুক্ত হবে না। তাহলে একটু চিন্তা করা যাক যে, যে ব্যক্তি চাকরি বা অন্যকোনো দায়িত্বে অবহেলা করছে সে কত ধরনের গোনাহে লিপ্ত রয়েছে?

চাকরিতে অবহেলার শাস্তি:
যারা চাকরি বা কোনো কাজের দায়িত্ব পেয়ে অলসতা করবে, ফাঁকি দেবে তাদের দুনিয়াবি শাস্তি তো হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা কখনো দৃঢ়তার সঙ্গে মুকাবিলা করতে পারবে না। আর আখেরাতে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। আল কোরআনে এসেছে, ‘বড় দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকদের থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় নেয়, আর যখন তাদের মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। ওরা কী চিন্তা করে না যে, ওদের পুনর্জীবিত করা হবে এক মহা দিবসে-যে দিন সমস্ত মানুষ বিশ্বপ্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে?’ (সূরা তাতফিফ-১-৬) এই আয়াত দ্বারা চাকরিতে অবহেলার শাস্তি প্রমাণিত হওয়া একটু ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বিষয়। আয়াতে মাপে কম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর জন্য আরবি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ‘তাতফিফ’। ‘তাতফিফ’ শুধু মাপে কম দেয়াই নয় বরং যে কোনো ব্যাপারে প্রাপককে তার অংশ কমিয়ে দেয়াকে ‘তাতফিফ’ বলে। এ ব্যাপারে মূফতী শফী (রহ.) এর আলোচনাই এখানে যথেষ্ঠ মনে করছি। তাই ওই আলোচনার অনুবাদ নিম্নে তুলে ধরছি।
 
তাতফিফ শুধু মাপা বা ওজন করার মধ্যেই নয় বরং যে কোনো ক্ষেত্রে হকদারকে তার হক থেকে কম দেয়াকেই তাতফিফ বলে। এই শিরোনামে মূফতি শফি (রাহ.) লেখেন, ‘কোরআন হাদিসে শুধু মাপা বা ওজন করার ক্ষেত্রে কমবেশি করাকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে, অন্য কোনো হক কম আদায় করার আলোচনা করা হয়নি। এর অর্থ কখনো এটা নয় যে, অন্য কোথাও প্রাপককে তার হক থেকে কম দিলে গোনাহ হবে না। গোনাহ সেখানেও হবে। এ দুটিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, মানুষ লেনদেনে এই দুই পদ্ধতিই সাধারণত ব্যবহার করে। এগুলোর ক্ষেত্রেই মানুষ বলে থাকে যে, সে কম দিয়েছে বা পুরাপুরি দিয়েছে। কিন্তু কোরআন ও হাদিসের এই ধরনের আলোচনার মাকসাদ হচ্ছে, প্রত্যেক হকদারকে তার হক পুরাপুরি আদায় করা। হক আদায়ে কমতি করা হারাম, চাই তা যে কোনো ধরনের হকেই হোক না কেন। আলোচনার খোলাসা হচ্ছে, হারাম হওয়ার বিধান শুধু মাপ বা ওজন করার ক্ষেত্রে কম করার সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয় বরং প্রত্যেক ওই বিষয়, যেখানে তা আদায় করা বা না করার হিসাব হয় তার সঙ্গেই এই বিধান সংশ্লিষ্ট; চাই তা মাপ বা ওজনের বস্তু হোক, গণনা বা অন্য কোনো মাধ্যমে হোক। হাদিসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘মুআত্তা ইমাম মালেক’ এ আছে, হজরত উমর (রা.) এক লোককে দেখেন, সে নামাজের রুকু, সেজদা পুরা করছে না। দ্রুত রুকু, সেজদা করে নামাজ শেষ করে দিচ্ছে। হজরত উমর (রা.) তাকে বলেন, তুমি তো নামাজে ‘তাতফিফ’ করেছ। অর্থাৎ নামাজের হক আদায় করে নামাজ পড়নি। হজরত উমর (রা.) এর এই কথা উল্লেখ করে ইমাম মালেক (রাহ.) বলেন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই হক পুরা করা বা কম করার বিষয় রয়েছে, চাই তা মানুষের কোনো হক হোক বা আল্লাহর হক বা অন্য কোনো মাখলুকের হক। এমনকী নামাজ, রোজা ও ওজু ইত্যাদির ক্ষেত্রেও। বিক্রির সময় মাপে কম দেয়া যেমন গোনাহ, অন্যান্য হক আদায়ের ক্ষেত্রেও একই রকম গোনাহ। শ্রমিক, মালিককে যতটুকু সময় দেয়ার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, তার থেকে মালিককে কম দেয়াও ওই রকম গোনাহ। নির্ধারিত সময়ে যতটুকু শ্রম দিয়ে কাজের কথা, তাতে অলসতাও ওই রকম গোনাহের শামিল। এই বিষয়ে সাধারণ মানুষসহ অনেক দ্বীনদারের মধ্যেও ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। নিজের চাকরিতে অবহেলাকে গোনাই মনে করা হয় না। এটাই আশংকার বড় দিক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে দ্বীনের বুঝ দান করুন-আমীন।’

তিনি আরো লেখেন ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর সূত্রে, নবী করিম (সা.) এর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি গোনাহের পাঁচটি শাস্তি রয়েছে। প্রথম গোনাহ হচ্ছে ওয়াদা খেলাপি করা। এর শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা, ওয়াদা খেলাপকারীর ওপর ওর দুশমনদেরকে বিজয় দেবেন। সে কখনো বিজয়ী হতে পারবে না। দ্বিতীয় গোনাহ বিজাতীয় আইন দ্বারা বিচার করা। যারা এরকম করবে, তারা সব সময় অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে জীবন যাপন করবে। দারিদ্রতা কখনো ওদের পিছু ছাড়বে না। তৃতীয় গোনাহ হলো, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার সাধারণ বিষয়ে পরিণত হওয়া। এমন জাতির মাঝে সর্বদা মহামারি লেগে থাকে। চতুর্থ গোনাহ মাপে কম দেয়া। যারা এই গোনাহে লিপ্ত হবে, তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকবে। পঞ্চম গোনাহ জাকাত আদায় না করা। যারা এই গোনাহ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর বৃষ্টি বন্ধ করে দেবেন। (কুরতুবি) তবরানি শরিফে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে জাতি গণিমতের মাল চুরি করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে দুশমনের ভয় ঢেলে দেবেন। যেখানে সুদি লেনদেন ব্যাপক হয়ে যায়, তাদের মাঝে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। যারা মাপে কম দিবে আল্লাহ তায়ালা তাদের রিজিক বন্ধ করে দেবেন। যারা বিচারের ক্ষেত্রে অবিচার করবে তাদের মাঝে মারামারি খুনাখুনি ব্যাপক হয়ে যাবে। যারা ওয়াদা খেলাপি করবে তাদের ওপর দুশমনের ভয় ঢেলে দেয়া হবে।’

এরপর মূফতি শফি (রা.) রিজিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে। তিনি লেখেন, ‘রিজিক বন্ধ হওয়ার দ্বারা তার প্রকৃত অর্থও উদ্দেশ্য হতে পারে। এই অর্থও হতে পারে যে, রিজিক আছে কিন্তু ভোগ করার শক্তি নেই। যেমন আমাদের অনেক সম্পদশালী বিভিন্ন রোগের কারণে সম্পদ ভোগ করতে পারছে না। দুর্ভিক্ষ দ্বারাও বিভিন্ন উদ্দেশ্য হতে পারে। এক হতে পারে বস্তুই নেই। আবার এমনো হতে পারে পণ্য আছে কিন্তু মূল্য এত বেশি যা ক্রয়ের নাগালের বাইরে। ফকির বানিয়ে রাখার অর্থও এমন। ফকির বানিয়ে রাখার অর্থ এটাও যে, সব সময় অর্থের চেয়ে প্রয়োজন বেশি দিয়ে অন্যের ওপর নির্ভরশীল বানিয়ে রাখা।’ (মাআরেফুল কোরআন, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-৬৯৩)  

আল্লাহ তায়ালা এই অন্যায়ের কারণে হজরত শুয়াইব (আ.) এর জাতিকে ধ্বংস করেছিলেন। বুঝার জন্য বলা, আল কোরআনে হক আদায়ে কম বুঝানোর জন্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ‘তাতফিফ’। তাতফিফ মানে হচ্ছে সামান্য কম দেয়া। মাপে কম দেয়ার অর্থ আদায়ের জন্য এই শব্দ ব্যবহারের কারণ হচ্ছে, কোনো কাজে ফাঁকি দিলেও সামান্যই দেয়া যায়। কিন্তু এর জন্য কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়। তাই দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করে ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করাই শ্রেয়। 

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//