ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

‘ত্রাণ চুরির ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড়ছেন না প্রধানমন্ত্রী’

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২০  

একটি ছবি পুরো বিশ্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল। কুড়িগ্রামের চিলমারীর সেই বাকপ্রতিবন্ধী বাসন্তীর কথা নিশ্চয় মনে আছে সবার। এই কাজটি একজন সাংবাদিক করেছিলেন, যার পেছনে ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের মূলচরিত্রে অভিনয়কারী বাসন্তী কিন্তু এখনও বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যারই বদান্যতায়ই। সেই সময় তিনি অভিনয় করে পেয়েছিলেন মাত্র ৫০ টাকা আর রিলিফের কিছু চাল। অপরদিকে এই নাটকের নেপথ্য নায়করা পুরো দেশকেই লুটেপুটে খেয়ে গেছে দীর্ঘদিন।

আসুন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারীদের নিয়ে একটু আলোচনা করি। বাকপ্রতিবন্ধী বাসন্তীকে নগদ ৫০ টাকা ও রিলিফের কিছু চাল দিয়ে ছবিটি তুলেছিলেন ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ ও কুড়িগ্রামের রিলিফ কমিটির কর্মকর্তা আনছার আলী। ছবিটি ছিল—বাসন্তীকে শাড়ির পরিবর্তে মাছ ধরার জাল পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং মুখের মধ্যে একটা কাঁচা পাটশাক গুঁজে দেওয়া হয়েছিল। ছবির মর্মার্থ ছিল, দেশের মেয়েরা অভাবের তাড়নায় ইজ্জত আব্রু ঢেকে রাখতে পারছে না এবং খাবারের তীব্র অভাব। এই ছবিটি ১৯৭৪ সালে ষড়যন্ত্রকারীদের পাতানো দুর্ভিক্ষের সময় বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়েছিল, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের জন্য দেশি-বিদেশিদের সহযোগিতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই একটি ছবি পুরো বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজে কালিমা লেপন করে দিয়েছিল, যা থেকে পরে ফায়দা লুটেছে ষড়যন্ত্রকারীরা।

শুরুতেই বলছিলাম না নিয়তি কাউকে ছাড়ে না। নিয়তির বিচার অনেক কঠিন। কোনও পরাশক্তিরই সেখানে বিচারকের ভূমিকায় থাকার সুযোগ নেই। বাসন্তী নাটকের অন্যতম ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ বছর কয়েক আগে রামপুরার বাসায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় খুব করুণভাবে মারা গেছেন। আরেকজন আনসার আলী, তিনিও বাসার সামনে প্রতিপক্ষের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আর বাসন্তী, ’৭৪ সালের পর ’৯৬ সাল পর্যন্ত তার খবর কেউ রাখেনি। ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে যারা তাকে ব্যবহার করেছিল, তারাও কোনও খোঁজ নেয়নি।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ওই বাসন্তীকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই জমি ও ঘর করে দেন। কিছুদিন পর সেই জমি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার বাসন্তীকে ঘর নির্মাণ করে দেন শেখ হাসিনা। কিছুদিন আগে সেই ঘরটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেলে তাকে সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। নিঃসন্তান অবস্থায় এই ভাতা নিয়েই ভাইয়ের সংসারে এখন থাকছে বাসন্তী। এই গল্পটি বলার মূল উদ্দেশ্য এটাই। কিন্তু ইতিহাসের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। বাসন্তী নাটকের জন্যও সেই সময় মিডিয়াকেই ব্যবহার করা হয়েছিল। এখনও তাই হচ্ছে। এখনও আমাদের সমাজে অনেকেই বাসন্তীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন। ওই বাসন্তী ছিল বোবা এবং অভাবী। আর এখনকার বাসন্তীরা বাকপটু ও স্বভাবী। তাদের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ষড়যন্ত্রকারীরা।

মিডিয়াকে জ্ঞান দেওয়ার দুঃসাহস আমার নেই। মিডিয়া অবশ্যই সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরবে। সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। এটাই মিডিয়ার ধর্ম। দেশের ক্ষতি হয় জনগণের ক্ষতি হয়, এমন কিছুই করা উচিত না। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কিন্তু তারা আবার কোনও বাসন্তী তৈরি করবেন না, এটা আশা করা নিশ্চয়ই অন্যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি দিয়ে বারবার বলেছেন, ‘এই সময়ে অনিয়ম করলে কাউকেই ছাড়া হবে না, সে যেই হোক।’ সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আমি কোনও চাল চোরের পক্ষে কথা বলতে আসিনি। কথা তখনই বলতে হয়, যখন দেখি জামায়াত-বিএনপি নিয়ন্ত্রিত কিছু ফেসবুক পেজের গুজবের মতোই কিছু মিডিয়া ভূমিকা পালন করছে। কিছু মিডিয়ার ভূমিকা কেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হলো, এবার সেই আলোচনায় আসি। এই পর্যন্ত হয়তো সর্বোচ্চ ২০ জন জনপ্রতিনিধিকে গরিবের জন্য দেওয়া রিলিফের চাল চুরির জন্য ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারই এদের ধরেছে, অন্য কেউ ধরেনি। কিন্তু কিছু মিডিয়ার ভূমিকা দেখলে মনে হবে দেশে মোট চাল-এর সংখ্যার চেয়ে চাল চোর বেশি।

ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে আছেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ৬১ হাজার ৫৭৯ জন জনপ্রতিনিধি। কোনও আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা কর্মী এই বিতরণের দায়িত্বে নেই। সরকারি বিধি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগও নেই। তারপরও মিডিয়াতে অহরহ দেখা যায় অমুক জায়গায় ত্রাণের চালসহ আওয়ামী লীগ নেতা আটক। এই অপপ্রচারটা কতটুকু নৈতিক? জনপ্রতিনিধিদের কোনও না কোনও রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু দলীয় পরিচয়ে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। সুতরাং কেউ অনিয়ম করলে তার রাজনৈতিক পরিচয় আশা উচিত না। সেটা এলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক, যে এর পেছনে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র আছে।

কিন্তু কতজন জনপ্রতিনিধি এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত? এই ১০-১৫ জনের জন্য গণহারে সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে। দেশে এমন কেউ আছেন যে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন তাদের পেশায় সবাই ভালো মানুষ। গুটি কয়েকজনের দায়ভার সবাই কেন নেবে? দেশে মেম্বার ৪১ হাজার ১৩৯ জন, মহিলা মেম্বার ১৩ হাজার ৭১৩ জন, ইউপি চেয়ারম্যান ৪ হাজার ৫৭১ জন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ/মহিলা ৯৮৪ জন, উপজেলা চেয়ারম্যান ৪৯২ জন, পৌর মেয়র ৩৩০ জন এবং এমপি ৩৫০ জন। এখানে মোট জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ৬১ হাজার ৫৭৯ জন। এমন না যে অনিয়মকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ১০ জন অভিযুক্তের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩ জন বরখাস্ত হয়েছেন, বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারাও শাস্তি পাবেন।

অনিয়ম ঘটে না পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ নেই। দেখার বিষয় হচ্ছে বিচার হয় কিনা। যারাই এসব ত্রাণ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কাউকেই ছাড়ছেন না প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশেই যেখানেই অনিয়মের খবর পাচ্ছে, সেখানেই চলছে অভিযান ও গ্রেফতার। কোনও দলীয় পরিচয় দেখা হচ্ছে না। কাউকেই ছাড়া হচ্ছে না।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে সংকট চলছে এই সমস্যা কারও পক্ষে একা মোকাবিলা করা সম্ভব না। সমাজের প্রতিটি মানুষকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, প্রতিপক্ষ নয়।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//