ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ মহলে উপকূল দিবসের দাবি

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ মহলে পৌঁছালো উপকূল দিবসের দাবি। সরকারের কাছে দেওয়া আবেদনে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের দিনটিকে সরকারিভাবে ‘উপকূল দিবস’ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে উপকূল অঞ্চলের মানুষ ও সম্পদের সুরক্ষায় ‘উপকূল উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের দাবিও তোলা হয় এ আবেদনে।

উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটি, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ও কোস্টাল জার্নালিজম নেটওয়ার্ক-সিজেএনবি’র পক্ষ থেকে উপকূল দিবসের দাবির আবেদন দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন মহলে।

উপকূল দিবস ও উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনের দাবির আবেদন হাতে পেয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি বলেন, ১২ নভেম্বর উপকূলবাসীর জন্য ভয়াল দিন। বহু মানুষ স্বজন হারিয়েছেন। অনেক পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপকূলের জন্য এ দিনটি স্মরণীয়। দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে এবং উপকূল উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা বিবেচনায় রেখে উপকূল দিবসের দাবি যৌক্তিক। উপকূল দিবস এবং উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনের বিষয়টি কেবিনেটে উত্থাপন করবো।

দাবির সমর্থনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, উপকূলীয় জনগোষ্ঠী ও সম্পদের সুরক্ষায় এটা অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। জনগনের কল্যাণে সরকার সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহন করবে। প্রত্যাশা রাখি, সরকার অচিরেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে।

পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূল অঞ্চল অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। উপকূল অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে বহুমূখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইসব পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষেত্রে উপকূল দিবস লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। উপকূল দিবসের দাবি আমি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবো।

সরকারী মহলে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণে সমুদ্ররেখায় বসবাসরত উপকূলীয় জনগোষ্ঠী এবং তাদের সম্পদের সুরক্ষার লক্ষ্যে ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস হিসাবে ঘোষণার জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। ২০১৭ সাল থেকে সমগ্র উপকূলবাসী এ দাবি জানিয়ে আসছে। দিনটি উপকূলবাসীর কাছে স্মরণীয়। এদিন বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা সাইক্লোন’, যা লন্ডভন্ড করে দেয় উপকূল। সরকারি হিসাবে ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানির কথা বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেন। সত্তরের এ ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতি বলে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। দিনটির কথা মনে এলে আজও উপকূলের বহু মানুষের চোখ ভিজে ওঠে।

উপকূল দিবসের দাবির আবেদনে বলা হয়, উপকূল অঞ্চলের এই প্রলয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয়ও ছুঁয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই লঞ্চযোগে তিনি ছুটে যান উপকূল অঞ্চলের মানুষের খোঁজ নিতে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ঘূর্ণিদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি দেখে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান। ত্রাণ ও পুনর্বাসনে পাকিস্তান সরকার বাংলার মানুষের প্রতি অবহেলা দেখালেও বঙ্গবন্ধু প্রাণপন চেষ্টা করেছেন মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেলটার, মুজিব কিল্লা, বনায়নসহ উপকূলের বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প সূচিত হয় তার হাতেই। এমনকি নিজের হাতে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ভূমিহীন মানুষদের মাঝে দেড় একর করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার উদ্যোগও নেন বঙ্গবন্ধু। উপকূলের মানুষের সুরক্ষায় তার ছিল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

আবেদনে বলা হয়, সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১৭ সাল থেকে ১২ নভেম্বর বেসরকারিভাবে উপকূল দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও একইভাবে র‌্যালী, আলোচনা সভা, প্রয়াতদের স্মরণে মিলাদ-দোয়া মোনাজাত ও স্মারকলিপি পেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ২০১৭ সালে উপকূলের ৩৪ স্থানে, দ্বিতীয় বছর ৫৩ স্থানে এবং তৃতীয় বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে ১২ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং উপকূলের ৬০ স্থানে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে বেসরকারিভাবে উপকূল দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়। চলতি বছর ১২ নভেম্বর ‘উপকূল দিবস’ এর দাবিতে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর (শনিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ও কোস্টাল জার্নালিষ্ট নেটওয়ার্ক-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় গোলটেবিল আলোচনা। জাতীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান (লক্ষ্মীপুর-৪) ও সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা (পটুয়াখালী-৩), পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারাসহ শিক্ষক, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। তাদের মতে, ১২ নভেম্বর উপকূল দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে এ দিনকে সামনে রেখে প্রতি বছর একটি করে থিম নির্ধারণ করে উপকূলের সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে।

সরকারি মহলে দেওয়া আবেদনে গোলটেবিল আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে:

১. উপকূলের প্রাণ ও প্রকৃতির সুরক্ষা ও টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিতে ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস পালন;
২. উপকূলের জীবন ও প্রকৃতির সুরক্ষা এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে ‘‘উপকূল উন্নয়ন বোর্ড’’ গঠন;
৩. মানুষ এবং সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে ও দুর্যোগের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণে বিদ্যমান ঘূর্ণিঝড় বার্তা ব্যবস্থার পরিবর্তন স্থানীয়ভাবে বোধগম্য সিগন্যাল ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে;
৪. উপকূলের কোটি কোটি মানুষের জীবন, জীবিকার প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির আধার মহাপ্রাণ সুন্দরবনকে রক্ষায় এর নিকটে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সব ধরনের ঝুকিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করা;
৫. কোষ্টাল জোন পলিসি ২০০৫ এর সাথে সমস্বয় করে উপকূল অঞ্চলের জন্য পরিকল্পিত সব ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ;
৬. উপকূলে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলে যেকোন দুর্যোগে সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার ব্যাবস্থা গ্রহণ;
৭. উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যত ঝুঁকি বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিক স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার কার্যকর বাস্তবায়নে দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি;
৮. জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি কমাতে স্থানীয় কম্যুনিটির নেতৃত্বে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন করা এবং প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি অনুদানকে উৎসাহিত করে টেকসই কাঠামো প্রণয়ন;
৯. সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিবারের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ; এবং
১০. সমুদ্র সম্পদ সংগ্রহ, উত্তোলন এবং তার ব্যবহারে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার প্রদান।

আবেদনে বলা হয়, উপকূল অঞ্চলের সংকট-সম্ভাবনার কথা বছরে অন্তত একবার সবাই মিলে আলোচনা এবং সে অনুযায়ী বছরব্যাপী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকারের বিষয়ে কাজ করার জন্যে উপকূলবাসীর পক্ষ থেকে ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’ ঘোষণার দাবি জানানো হচ্ছে। যে দিবস উপকূলকে সুরক্ষার কথা বলবে, উপকূলের সংকট-সম্ভাবনার কথা বলবে, উপকূলকে এগিয়ে নেওয়া কথা বলবে। যে দিবসে উপকূলবাসী নিজেদের কথা বলতে পারবে। উপকূল দিবস ঘোষণার মধ্যদিয়ে উপকূলের টেকসই সুরক্ষা, উপকূলের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়ন, উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কাজ আরও সহজ হবে।

উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটি ও কোস্টাল জার্নালিজম নেটওয়ার্কের পক্ষে রফিকুল ইসলাম মন্টু ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের পক্ষে এম. জাকির হোসেন খান এ আ¦েদনে স্বাক্ষর করেন।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//