ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

লক্ষ্মীপুরে কুকুর আতঙ্ক : স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

লক্ষ্মীপুরে জনজীবনে এক ভয়ানক আতঙ্ক হয়ে উঠেছে কুকুর। নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না থাকায় কুকুর দ্বারা প্রায়ই কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। গত ৩ বছরে কুকুরে আক্রান্ত হয়ে শুধু সদর হাসপাতালে চার হাজারেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ পথ কুকুরের মাথা ও গাঁড়ের বেশ অংশে শরীরের মাংস পচে ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ। পচন যন্ত্রণায় কুকুর দুর্বল হয়ে ঢুকে পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ মানুষের বাসা-বাড়িতে। এতে একদিকে জীবাণু ও দূর্গন্ধ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্ক রয়েছে, তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের গত তিন বছরের তথ্যসূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে কুকুরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৬১৫ জন। চলতি বছরের ৯ মাসেই ৯০৮জন কুকুরের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে গত বছরে (২০১৮ সাল) সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৬৬২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮২জন ও ২০১৬ সালে ১ হাজার ৬৩জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে চলতি বছর কুকুর আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা চিকিৎসকদের।

জানা যায়, কুকুর নিধরেন উপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে পৌরসভা ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে কুকুর নিধন বন্ধ করে দেওয়া হয। এতে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জন জীবন।

প্রাণী কল্যাণ আইন-২০০৯ জলাতঙ্ক কুকুর ধারা ৬ এর ৩ (ঘ) উপধারা অনুযায়ী নিশ্চিত জলাতংক প্রাণী, যা দ্বারা মানুষের নিশ্চিত জলাতংক হতে পারে বলে সরকার ঘোষণা করে, প্রাণী সম্পদ বিভাগ ওই প্রাণীকে নিধন করতে পারবে। তবে (ইউথেনিশিয়া) ব্যথাহীণ ইনঞ্জেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে নিধন করা যাবে। এ বিধান ব্যতিত ব্যথা প্রয়োগ করে কুকুর হত্যা করলে ২ বছরের কারাদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান রয়েছে।
তবে ব্যথাহীণ ভাবে ইনঞ্জেকশন প্রয়োগে জলাতঙ্ক কুকুর নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ নেই লক্ষ্মীপুর সংশ্লিষ্ট প্রাণী সম্পাদ অধিদপ্তরের। এতে ক্রমেই বেড়ে চলছে কুকুরের উপদ্রব। পৌর শহরের মাছ ও মাংস বাজার, থানা রোড, মুরগীহাটা, উত্তর তেমুহনী, দক্ষিণ তেমুহনী, লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজ রোডসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দলবদ্ধ থাকে এসব কুকুর। চলাচলে এদের আক্রমনের শিকার হন সাধারণ মানুষ।

এদিকে দলবদ্ধ কুকুর নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া করে হিংস্র রূপ নেয়। একে অপরের মাথা ও গাঁড়সহ বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়ে গভীর ক্ষত করে। ক্ষত স্থানে বিভিন্ন ধুলাবালি ও মশা-মাছি বিচরণ করে বিষ্টা ছড়ালে ইনফেকশন হয়ে জীবদ্দশায়ই মাংস পচে দূর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানায়, এক সময় পৌর কর্তৃপক্ষ নগর এলাকায় কুকুর নিধন বা নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে তা হচ্ছে না। রাস্তাঘাট, বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কুকুরে উপদ্রুব বেড়েছে। মোড়ে মোড়ে থাকে দলবদ্ধ হয়ে। পাশ দিয়ে হেটে গেলেই আক্রমন করে। আবার মাথা পচা কুকুরে দূর্গন্ধ ও জীবাণু ছড়াচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন তারা।

সম্প্রতি ছোট্ট শিশু মিম মায়ের সাথে কেনাকাটা করতে পৌর শহরের স্বর্ণকার রোড এলে দলবদ্ধ কুকুরের আক্রমনের শিকার হয়। এসময় কুকুর তার বাঁ পায়ে কামড় দেয়। পরে তাকে দ্রুত সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশু মিমের মা আয়েশা সুলতানা জানান, কুকুরের কামড়ে মিম কান্না শুরু করে, আমিও ভয় পেয়ে যাই। পরে চিকিৎসার পর একটু স্বস্থি পান তিনি।

লক্ষ্মীপুর পৌর বাজারের পাশে জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গাঁড়ের মাংস পচে দূর্গন্ধযুক্ত অসুস্থ্য একটি কুকুর প্রবেশ করে বিছানার নিচে শুয়ে পড়ে। এতে বাড়িজুড়ে পচা দূর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। কক্ষে প্রবেশ করলেই দূর্গন্ধ পেয়ে খুঁজতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে বিছানার নিচে অসুস্থ্য কুকুরটিকে দেখে তিনি নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এদিকে নতুত মুরগি বাজার ব্রীজটির উপর মাথায় পচনে আক্রান্ত একটি কুকুর অসুস্থ্য যন্ত্রণায় মারা যায়। এতে ওই এলাকা জুড়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হলে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কুকুরটিকে সরিয়ে নেয়।

লক্ষ্মীপুর পৌর বাজারের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী বলেন, বাজার এলাকায় পুরুষ কুকুর ও মহিলা কুকুর সঙ্গমের সময় অন্য কুকুর দলবদ্ধ ভাবে আক্রমন করে পুরুষ কুকুরটির মাথা ও গাঁড়ে কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। চিকিৎসার অভাবে এসব ক্ষতগুলো মাংস পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। অপর দিকে স্টেশনারী ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম রাসেল বলেন, মাছ-মাংস, সবজি বাজারের ব্যবসায়ীদের অস্ত্রাঘাতে কুকুরের শরীরে পচ হতে পারে। পচনযন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পরে কুকুর। এতে জড়িয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারাও ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ব্যপারে পৌরসভার কোন মাথা ব্যথা নেই।
লক্ষ্মীপুর সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ তৌহিদুর রহমান রেজা শীর্ষ সংবাদকে জানান, লক্ষ্মীপুরের কুকুরে উপদ্রব বেড়েছে। এসব কুকুরের মধ্যে কোনটির আবার মাথায় পচন রোগে আক্রান্ত। এতে মানুষেও সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে। অপর দিকে পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা কুকুর নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ কুকুরের কামড়ে সংক্রমণ, টিটেনাস রোগের আশঙ্কা থাকে। শিশুদের নাক-মুখে কুকুর কামড়ালে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই মারা যায়। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর বা চিকার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে তিন মাসের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। শরীরের নিচের অংশে কামড় বা আঁচড় দিলে এবং এর মাত্রা কম হলে সাত বছর সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষত স্থান ব্যথা, জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, জ্বর হওয়া, খিঁচুনি, মুখ দিয়ে লালা পড়া, বাতাস সহ্য করতে না পারা ও আলো দেখলে ভয় পাওয়াসহ অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে কুকুরে কামড় বা আঁচড়ের পর ক্ষত স্থানটি ক্ষারযুক্ত সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট ধরে ধুতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আনোয়ার হোসেন শীর্ষ সংবাদকে জানান, কুকুর কামড় বা আচড়ে র‌্যাবিস ভেকসিন ইনঞ্জেকশন না নিলে জলাতঙ্ক হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। এ জন্য সদর হাসপাতালে এ রোগের জন্য বিনা খরচে চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে কুকুরের মাথা ও গাঁড় ইনফেকশন জনিত মাংস পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অসুস্থ্য কুকুরের সংস্পর্শে এলে মানুষেরও স্কীন জনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এছাড়াও পচা দূর্গন্ধে মানুষের সাজতন্ত্র জনিত বিভিন্ন জটিল রোগেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সচিব আলাউদ্দিন শীর্ষ সংবাদকে বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই কোন প্রাণী হত্যা করা যাবে না। এতে সাজা ও জরিমানা হতে পারে। অতিরিক্ত কুকুরের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্যাকসিন সংকট রয়েছে। নোয়াখালী থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা চলছে। তবে খুবদ্রুত কুকুর নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মো. আয়ুব মিয়া রানা শীর্ষ সংবাদকে জানান, লক্ষ্মীপুরে কুকুর বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে শুনেছি। কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হলে মৃত্যু হতে পারে। পৌরসভা থেকেও সমন্বয় করা হয়েছে। কুকুর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পৌরসভাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার করা হবে। তিনি আরো জানান, শহর জুড়ে কুকুরের গাঁড় ক্ষত ইনফেকশন জনিত কারণে মারাত্মক পচন ও দূগন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জনবল সংকটের কারণে এদের চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//