ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সাহাবা গল্প...

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২০  

সুয়াইবিত (রা.) এর রসিকতা: হজরত উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের এক বছর পূর্বে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ব্যবসার উদ্দেশ্যে বসরা সফরে গিয়েছিলেন। সফরসঙ্গী ছিলেন হজরত নোমান (রা.) এবং হজরত সুয়াইবিত (রা.)। তারা দুইজনই বদরী সাহাবী। সফরে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন হজরত নোমান (রা.)।

একদিন একস্থানে যাত্রাবিরতি করা হলো। হজরত আবু বকর (রা.) কোনো ব্যক্তিগত প্রয়োজনে একটু বাইরে গিয়েছিলেন। তখন হজরত সুয়াইবিত (রা.) নোমান (রা.)-কে বললেন, খুব খিদে পেয়েছে। একটু খেতে দাও তো।  তিনি বললেন, আবু বকর বাইরে গেছেন। তিনি ফিরলে তখন দেখা যাবে। এখন খেতে দেয়া যাবে না।

এতে সুয়াইবিত (রা.) মনোক্ষুণ্ন হলেও কিছু বললেন না। কিন্তু মনে মনে ভাবলেন, সময়মতো এর প্রতিশোধ নিতে হবে। কাফেলা এগিয়ে যাচ্ছিল। একদিন একস্থানে যাত্রাবিরতি করলে সেখানকার স্থানীয় লোকদের সঙ্গে সুয়াইবিত (রা.) আলাপ জমিয়ে তুললেন। কথায় কথায় বললেন, আমার একটা গোলাম বিক্রি করব। তোমরা কেউ কিনবে? তাদের একজন কিনতে আগ্রহী হলো। তিনি বললেন, তোমরা তো গোলামটা কিনতে চাচ্ছো। কিন্তু তার একটা বদঅভ্যাস আছে।

সে নিজেকে গোলাম হিসেবে স্বীকার করে না। বরং আযাদ বলে দাবী করে। তোমরা যখন তাকে কবজা করতে যাবে তখন সে নিজেকে আযাদ দাবী করলেও তোমরা পিছু হটো না। বরং জোরপূর্বক তাকে কবজা করে নিও। তারা এতে রাজী হয়ে গেল এবং মূল্য বাবদ দশটি উঁট পরিশোধ করে দিল। চুক্তি অনুযায়ী কবজা করার সময় এসে তারা আরবের রেওয়াজ অনুযায়ী নোমান (রা.) এর গলায় চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলো।  তিনি যতোই বলেন: আরে করো কি? আমি তো কোনো গোলাম নই। ছাড়ো আমাকে। সুয়াইবিত তোমাদের সঙ্গে রসিকতা করেছে।  কিন্তু তারা বলল, আমরা জানি, তোমার একটা বদ অভ্যাস আছে। তুমি নিজেকে গোলাম স্বীকার করতে চাও না। জলদি চলো আমাদের সঙ্গে।

তারা তাঁকে জোরপূর্বক নিয়ে চলে গেল। হজরত আবু বকর (রা.) এসবের কিছুই জানতেন না। তিনি এসে সব জানতে পেরে ওই দশটি উট নিয়ে তাড়াতাড়ি তাদের পেছনে রওয়ানা হয়ে গেলেন। কোনো রকমে তাদেরকে ধরতে পারলেন। অনেক বুঝানোর পর তারা বাস্তবতা বুঝতে পারল। এবং দশটি উট গ্রহণ করে নোমান (রা.)-কে মুক্ত করে দিল। সফর থেকে ফিরে এসে তারা রাসূল (সা.)-কে পুরো ঘটনা শুনালেন। শুনে রাসূল (সা.) অনেক হাসলেন। যখনই কোনো মজলিসে এই ঘটনার আলোচনা উঠত, সবাই স্বতঃস্ফুর্তভাবে হাসতো।

মুআবিয়া (রা.) এর দক্ষতা: রবিয়া ইবনে নাকা বর্ণনা করেন, হজরত মুআবিয়া (রা.)-কে কেউ জিজ্ঞেস করলো আপনি এত উচ্চস্তরের জ্ঞান কিভাবে অর্জন করলেন? তিনি বললেন, কাউকে বিশ্বাস করে তার ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আমি কখনো পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকিনি। বরং বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে তার কর্মকাণ্ডের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখেছি। যেন আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করার কুচিন্তা তার মাথায় না আসে।

ছাআ’লাব বর্ণনা করেন, যুদ্ধের ময়দানে তিনি নিজ সেনাবাহিনীকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখলেন, এক পাশের সারি কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে। তিনি সুশৃঙ্খল হওয়ার নির্দেশ দিলে তৎক্ষণাৎ সেনারা সুশৃঙ্খল হয়ে গেল। অন্য দিকে দৃষ্টি দিয়ে সেদিকেও কিছুটা অবিন্যস্ততা দেখতে পেলেন। এক ইশারায় তাদেরকেও সোজা করে ফেললেন।

তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, এত সুশৃঙ্খলভাবে যুদ্ধ করার মনমানসিকতা কি আপনার উসমান (রা.) এর যামানা থেকেই ছিল। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ, যুদ্ধের শৃঙ্খলার ব্যাপারে আমি হজরত উমর (রা.) এর যামানা থেকেই চিন্তা ভাবনা করে আসছি।

আদম ও হাওয়ার সন্তান: আমাদের নিকট এই বর্ণনা পৌঁছেছে, এক ব্যক্তি মুআবিয়া (রা.) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে দেহরক্ষীকে বললো, তুমি আমীর মুআবিয়া (রা.)-কে গিয়ে বলো এমন ব্যক্তি আপনার সাক্ষাৎপ্রার্থী যার পিতা-মাতা এবং আপনার পিতা-মাতা একই। অর্থাৎ সে সম্পর্কে আপনার ভাই।

পাহারাদার মুআবিয়া (রা.)-কে এই কথা বললে তিনি কিছুটা অবাক হলেন। বললেন, কি জানি, আমি তো তাকে চিনতে পারছি না। যাই হোক, দেখা যেহেতু করতে এসেছে নিয়ে এসো। তাকে সামনে উপস্থিত করলে মুআবিয়া (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিভাবে আমার ভাই হওয়ার দাবি করলে?

জবাবে সে বলল, আমি আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) এর সন্তান। আপনিও তো তাদেরই সন্তান। এজন্য আপনাকে ভাই দাবি করেছি। মুআবিয়া (রা.) গোলামকে বললেন, তাকে এক দেরহাম দিয়ে দাও। সে কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বলল, ভাইকে শুধু এক দেরহাম দিতে বললেন? মুআবিয়া (রা.) জবাব দিলেন, আদম ও হাওয়ার সূত্রে যারা আমার ভাই হয়, তাদের সবাইকে যদি আমি দেয়া শুরু করি তাহলে হয়তো তোমার ভাগ্যে এই এক দেরহামও জুটবে না।

বল্লম কি ভারী! হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, মুগীরা ইবনে শো’বার নিকট একটি ভারী বল্লম ছিল। যখন আমরা রাসূল (সা.) এর সঙ্গে কোনো যুদ্ধে গমন করতাম। তখন সেও তাঁর ভারী বল্লম নিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকত। ভারী বল্লম নিয়ে চলতে কষ্ট হলে চালাকি করে রাস্তার পাশে কোথাও ফেলে রাখত।

সে মনে করতো পরে যারা আসছে তাদের কেউ না কেউ বল্লমটা দেখে ভাববে, বোধ হয় কোনো মুসলিম সৈনিকের বল্লম তার অগোচরে পড়ে গেছে। সুতরাং তার জিনিস তাকে পৌঁছে দেয়া একজন মুসলমান হিসেবে আমার কর্তব্য। ইসলামের নির্দেশও তাই। কোনো জিনিস রাস্তা-ঘাটে পড়ে থাকতে দেখলে তা উঠিয়ে হেফাযত করে তার মালিককে পৌঁছানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।

এটা মনে করে অন্য কোনো ব্যক্তি তা উঠিয়ে খোঁজ করে মুগীরার বল্লম তাকে পৌঁছে দিতেন। এভাবে তিনি চালাকির মাধ্যমে বল্লম বহন করার কষ্ট থেকে বেঁচে যেতেন। পরিবর্তে অন্য কোনো ব্যক্তিকে তা বহন করে নিয়ে যাওয়ার কষ্ট করতে হতো। হজরত আলী (রা.) বলেন, একদিন আমি তাকে বললাম, তুমি সব সময় এই কাজ করো। এটা আমি রাসূল (সা.)- কে বলে দেব।

হজরত মুগীরা (রা.) হেসে বললেন, এমন কাজ ভুলেও করতে যেও না। তাহলে অনেক লোক বিপদে পড়ে যাবে। হারানো জিনিস আর পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ তোমার কথা শুনে রাসূল (সা.) যদি রাস্তায় পড়ে থাকা জিনিস উঠিয়ে মালিকের নিকট পৌঁছে দিতে নিষেধ করে দেন, তাহলে বাস্তবেই যাদের জিনিস হারিয়ে গেছে অন্য কেউ তা পেলেও মালিকের নিকট পৌঁছাবে না। ফলে তারা সত্যিই বিপদে পড়ে যাবে। হারানো জিনিস আর পাবে না।

হুরমুজানের কৌশলে প্রাণরক্ষা: মুহাম্মদ ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত, জালুলার যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হলো। সেনাপতি আবু মূসা আশআ’রি (রা.) অগ্নিপূজক সরদার হুরমুজান এবং আরো বারো জন সেনা অফিসারকে গ্রেফতার করে খলীফা হজরত উমর (রা.) এর দরবারে পাঠিয়ে দিলেন। তারা তাদের রীতি অনুযায়ী রেশমী কাপড় পরিহিত ছিল। হাতে সোনার বালা, মাথায় সোনার টিকলিতে দেখতে অদ্ভূত লাগছিল।

মুসলমানরা এ ধরনের বেশভূষা দেখে অভ্যস্ত ছিলেন না। তাই তারা বন্দীদেরকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে দেখছিলেন আর বিস্ময়ে নানা মন্তব্য করছিলেন। বন্দীরা মদিনায় পৌঁছলে হজরত উমর (রা.)-কে তা জানানোর প্রয়োজন দেখা দিল। কিন্তু ঘরে তাঁকে পাওয়া গেল না। খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেল তিনি মসজিদে। শরীরের নিচে একটি চাদর দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন।

হরমুজান এই দৃশ্য দেখে যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলো না। অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। দৃষ্টি না সরিয়েই বলল, এই কি মুসলমানদেও সম্রাট?
 
হ্যাঁ ইনিই আমিরুল মু’মিনীন।

কিন্তু তার দেহরক্ষীরা কোথায়? 

তাঁর কোনো দেহরক্ষী নেই। আল্লাহই তার হেফাযতকারী। 

হজরত উমর (রা.) ঘুম থেকে জেগে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। এক পর্যায়ে তাদের সম্মুখে ইসলামের মাহাত্ম তুলে ধরে ইসলাম কবুলের আহ্বান জানালেন। কিন্তু তারা এতে সম্মত হলো না। তারা যেহেতু সেনা অফিসার, জীবিত রাখলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য তাদেরকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

হুরমুজানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পূর্বে সে পানি পান করতে চাইল। পানি আনা হলে হজরত উমরের (রা.) দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয় এই পানি পান করার পূর্বেই আমাকে হত্যা করা হবে। তাই না? উমর (রা.) বললেন, কখনো না। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, এ পানি পান করার পূর্বে তোমাকে হত্যা করা হবে না। 

ঠিক বলছেন তো? আপনার কথার অন্যথা হবে না তো? বললাম তো। আমরা মুসলমান। যা বলি তার ব্যতিক্রম কখনো করি না। হুরমুযান পানির পাত্র নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারল। সম্পূর্ণ পানি মাটিতে পড়ে গেল।

হজরত উমর (রা.) চিৎকার করে উঠলেন, এটা কি করলে?
জল্লাদকে হুকুম দিলেন ওকে এখুনি হত্যা কর। 
হুরমুযান বলে উঠল, উঁহু তা হবে না।
সবাই তার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

হুরমুযান ধীরে ধীরে উমর (রা.)-কে বলল, আপনি কি বলেননি পাত্রের পানি পান না করা পর্যন্ত তোমাকে হত্যা করা হবে না? এখন তো পানি মাটিতে পড়ে গেছে যা পান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং আপনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ীই আমাকে হত্যা করা আপনাদের পক্ষে সম্ভব নয়। 

উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যথা হজরত জোবায়ের (রা.), আনাস (রা.), আবু সাঈদ (রা.) ও হুরমুযানের কথা সমর্থন করলেন। উমর (রা.) তার প্রাণদণ্ডের নির্দেশ মওকুফ করে দিয়ে বললেন, সে চালাকি করে প্রাণ বাঁচালো। আমি তার চালাকি বুঝতে পারিনি। তারপর হুরমুযান ইসলাম গ্রহণ করলেন।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//