ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সুযোগ পেলেই লক্ষ্মীপুরের তাসনিমা হবে ব্শ্বি চিত্রশিল্পী

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বৃদ্ধ দাদু ছবি আঁকছেন। পাশে বসে দেখছে সে। তাতেই ভালো লাগা। পরে নিজেই আঁকা শুরু করেন। ভরিয়ে দেন বই-কাগজ, দেওয়াল। কখনো বা পাতিলের নিচে জমে থাকা কালো অংশে। যদিও পাখি, মাছ, ফুল ও মানুষের ছবিগুলো দাদুর মতো সুন্দর হতো না। পড়া ও খেলাধুলা ফাঁকি দিয়ে এগুলো করতেন।

চিত্রকার ফাতেমাতুস জোহরা তাসনিমা

এজন্য বকা শুনতেন আম্মুর। তবুও থেমে যাননি। শিল্পকলার প্রতি ছোটবেলার গভীর আগ্রহের আজও ভাটা পড়েনি। মেধা ও মননশীলতায় ছবি অঙ্কন করছেন ক্যানভাসে। আলাপচারিতায় কথাগুলো বলেছেন ফাতেমা তুজ জোহরা তাসনিম। তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের এনজিও কর্মী ফজলুর রহিম ও মাদ্রাসা শিক্ষিকা নাসিমা আক্তারের মেয়ে।

ছবি আঁকায় প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই তাসনিমের। জানা নেই চিত্রাঙ্কনের ব্যাকরণ! স্বশিক্ষায় শিক্ষিত শিল্পী তিনি। সামাজিক অসজ্ঞতির, দেশপ্রেম, মাতৃত্ব সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ছবি আঁকছেন। সৃষ্ট শিল্পকর্মে মুগ্ধ করছেন সকলকে। তার হৃদয়ে সঁপে থাকা আঁকা-আঁকির নেশাটাকেই পেশা করে ফেললেন। লক্ষ্মীপুর জেলা একুশে বইমেলায় প্রদর্শিত হয়েছে তার আঁকা ত্রিশটিরও বেশি ছবি। এখানে বিভিন্ন মূল্যে ক্যানভাসগুলো ক্রয় করতে পারবে গ্রাহকরা। যদিও এরআগে কখনো ছবি বিক্রি করেননি।

তাসনিমের আম্মু রিমোট হাতে নিয়ে বিছানায় বসে টেলিভিশন দেখছেন। দৃশ্যটি দেখা মাত্রই পড়ার টেবিলে বসে রং পেন্সিলের মাধ্যমে অঙ্কন করে ফেললেন। এটি ছিল তার প্রথম পুর্ণাঙ্গ স্কেচ। ছবিটি দেখার পর সন্তানের প্রতিভায় বেজায় খুশি মা। তবুও নিষেধ ছিল আঁকা-আঁকিতে। কয়েক মাস পর তাসনিমের স্কুলে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা হয়। পরে সেই মায়ের পরামর্শে অংশগ্রহন ও মুক্তিযোদ্ধের একটি চিত্র অঙ্কন করেছেন। পেয়েছেন সেরার পুরস্কার। তাতে কিছুটা আত্মবিশ্বাস বাড়লে, বেড়ে যায় আত্মীয়দের ট্রল। কটু মন্তব্যকে উপেক্ষা করে চালিয়ে যান তার সংগ্রাম।

বাসার দেওয়াল ভরিয়ে পেলেছেন তার আঁকা ছবিতে। আঁকা চিত্রগুলো বিক্রি না করলেও উপহার দিতেন বন্ধু, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের। রং-তুলিতে আঁকা প্রথম পেইন্টিং ক্যানভাসটি বন্ধু মাহমুদুল হাসান সাফিনকে উপহার দিয়েছেন। তাতে আবেগে আপ্লুত হয়ে বন্ধু বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে যেন-জীবন্ত জয়নুল’ (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন)। বন্ধুর কথায় অনুপ্রানিত হয়েছেন তাসনিম। প্রতিজ্ঞা করেছেন সেরা চিত্রশিল্পী হওয়ার।

প্রবল ইচ্ছা ছিল চারুকলায় পড়ালেখা করার। কিন্তু সেটি পুরণ হয়নি। আক্ষেপ করে ফাতেমা তাসনিম বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর ঢাকায় কোচিং করেছেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়ায় চারুকলায় ভর্তি হওয়া হয়নি। কারন, পরিবারের ধারণা ছিল, ঐখানে ভর্তি হলে সন্তান বিপথে চলে যাবে। মা-বাবার প্রতি আক্ষেপ এখনো যায়নি তার। মজার বিষয় হচ্ছে, কোচিংয়ে দিন-রাত পড়ায় ব্যস্ত থাকার পরও তিনটি ছবি অঙ্কন করেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, রং-তুলি দিয়ে ক্যানভাসে প্রথম ছবি আঁকা-আঁকি শুরু করেন অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে। আঁকা ছবিগুলো নিজ ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করতেন। এতে বেশিরভাগ আত্মীয়-স্বজন সহ সহপাঠিরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ ও করুচিপূর্ণ কথা বলতেন। কেউবা, জাহান্নামী বলে উপহাস করতেন। তবুও আপন সত্তায় লালন করা শিল্পকর্ম ছাড়েননি। আঁকা-আঁকিতে মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সাপোর্ট পেয়েছেন। সবসময় সহযোগিতা পেয়েছেন ছোট বোন রুবাইয়া আক্তারের। সেও একজন চিত্রশিল্পী, যদিও তাসনিমের মতো না। উজ্জ্বল গাঢ় রং দিয়ে ছবি আঁকতে ফাতেমা তাসনিম বেশি পছন্দ করেন।

ফাতেমা তুজ জোহরা তাসনিম বলেন, রংতুলির এই জগৎ নিয়ে বাকি সময় কাটাতে চান। নিজে কখনো ছবি আঁকা শিখতে পারেননি। এজন্য একটি স্কুল করার ইচ্ছা রয়েছে তার। যেখান থেকে আগামী প্রজন্ম চিত্রাঙ্কনে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

চিত্রকার তাসনিম

ভাষার প্রদীপের প্রধান সমন্বয়ক ও সাংস্কৃতিকর্মী ফাহাদ বিন বেলায়েত বলেন, আমাদের চারপাশে অনেক প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে আলো ছড়ানোর পূর্বে অযত্ন-অবহেলায় চাপা পড়ে যায় পুষ্পপুট প্রতিভাগুলো। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া শত বাধা ডিঙিয়ে মেধা ও শ্রম দিয়ে নিজ শিল্পীসত্তাকে লালন করছেন তাসনিম। প্রশংসনীয় এ কাজের মঙ্গল কামনা করেন তিনি। তাছাড়া প্রত্যান্ত অঞ্চলের মেধাবীদের যত্ন নেওয়ার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টদের প্রতি।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//