আমার শহিদুল্লাহ মারা গেছে ভাই. ওসি রামগঞ্জ

আমার শহিদুল্লাহ মারা গেছে ভাই, হসপিটালে আসবেন? একটু এসে দেখে যান। আজ ভোর সাড়ে ৮টায় মারা গেছে। আমি হসপিটালে আছি, খবর পেয়ে সাথে সাথে চলে আসছি।
মোবাইলে কথাগুলো কান্নায় ও আবেগ দিয়ে জানান, রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
যেখানে আমি তীব্র শীতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুম চোঁখে। একজন মানসিক প্রতিবন্ধীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ওসি ছুটে গেছেন হসপিটালে। চক্ষুলজ্জা বা নিজের বিবেকের প্রশ্নে যেন জর্জরিত না হতে হয় সে কারনে আমিও ছুটে গেলাম হসপিটালে।

ওসির ফোন পেয়ে হসপিটালে আসেন ইছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শহিদ উল্যাহ, স্থানীয় ইউপি সদস্য ছাত্রলীগ নেতাসহ অনেকে।
কথাগুলো এ কারনে বলা যে, শহিদ উল্লার গ্রামের বাড়ী উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের শ্রীরাপুর গ্রামে। শ্রীরামপুর উত্তর ভূইয়া বাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্ম। ৮ ভাই ৪ বোন। ছোটবেলা থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বেশিরভাগ সময়ই কাটতো রামগঞ্জ থানার সামনে। বিয়ে করলেও স্ত্রী স্বামীর মানসিক অবস্থা দেখে চলে যান অন্যত্রে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকতো, কারো কোন ক্ষতি না করলেও সারাক্ষন এদিক সেদিক ঘুরতো। সবার পরিচিত মুখ হয়ে পড়েন শহিদ উল্লা।

এভাবেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন শহিদ উল্লা।

মাস পাঁচেক পূর্বে হটাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন শহিদ উল্লা। আত্মীয়স্বজন খুব একটা না থাকলেও প্রতিবেশীরা তার খোঁজে রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে অবহিত করলে তিনিও চিনতে পারেন (পাগলা শহিদুল্লা)কে। দেশের বিভিন্ন থানায় ওয়ার্লেসের মাধ্যমে ম্যাসেজ প্রেরন করেন। অবশেষে প্রায় ২০দিন পুর্বে কিশোরগঞ্জ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন রামগঞ্জে। পাগল মানুষ, ঘরে থাকা যার কোন কারন থাকতে পারেনা। আবারও পূর্বের ঠিকানা, রামগঞ্জ থানার সামনেই যারা আদি বসবাস।
ওসির সাথে তার সখ্যতা, আগের মতো পাগলামি নেই। ওসি যা বলতেন তাই শুনতেন। ওসি আনোয়ার হোসেনও প্রতিদিনকার খাবার ব্যবস্থাসহ ১শ টাকা দিতেন। পাগলা শহিদ উল্লা সবার কাছে বলেন বেড়াতেন, আমি ১শ টাকা বেতনের চাকরী পেয়েছি।
সে শহিদ উল্লা, গত সোমবার রাতে হটাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায়। অসুস্থ্য হয়ে পড়েন মারাত্মক। ওসি সাহেবের টেবিলে বসা অবস্থায় রামগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী আমাকে জানান, ভাই পাগলা শহিদ উল্যাহ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে, তাকে হসপিটালে ভর্তি করা দরকার। কোথায় নিলে ভালো হবে। আমি সাথে সাথে বিষয়টি ওসি আনোয়ার সাহেবকে অবগত করি। তিনিও সাথে সাথে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার গুনময় পোদ্ধারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে ছুটে যান হসপিটালে। প্রতিনিয়ত খবর রাখতেন শহিদ উল্লার।
শহিদ উল্লা (৬০) আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কাছে হার মানেন। হসপিটাল থেকে খবর দেয়া রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে। তিনি ভোরে সরকারী হসপিটাল গিয়ে মোবাইলে আমাকেও তার মৃত্যুর সংবাদটি জানান।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে শহিদ উল্লার লাশ হস্তান্তর করা হয় ইউনিয়ন পরিষ চেয়ারম্যান শহিদ উল্যাহ, ইউপি সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতার হাতে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শহিদ উল্যাহ জানান, রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি যে মানবিক দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা বিরল।