নাশকতার পরিকল্পনায় সক্রিয় জঙ্গিরা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিউ জেএমবির জঙ্গিরা কোণঠাসা হলেও এখনো রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বোমা হামলা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটনানোর জন্য তারা কর্মপরিকল্পনাও করছে।

সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার মাতুয়াইল এলাকা থেকে দুই নিউ জেএমবি সদস্য গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপালিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের ওয়েবসাইট অ্যান্ড ইমেইল ক্রাইম টিম।  

গ্রেফতাররা হলেন-  মো. আল আমিন (২৭) ও শেখ গোলাম হোসেন ওরফে মিলাদ (২৭)। তাদের মধ্যে আল আমিন সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানার ভাদেশ্বর দক্ষিণভাগের (দক্ষিণগাও) তফজ্জুল হোসেনের ছেলে। শেখ গোলাম হোসেন ওরফে মিলাদ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার দুর্লভপুর গ্রামের মৃত শেখ চেরাগ আলীর ছেলে।

সূত্র জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মাতুয়াইল মাদ্রাসা বাজারের মসজিদের পূর্ব কোনা থেকে প্রথমে আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শেখ গোলাম হোসেনকে রাত সাড়ে ৭টায় ডেমরা থানার হাজী সিএনজি স্টেশনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি সোনালী রঙের সাওমি মোবাইল ফোন, একটি কালো রঙের নকিয়া মোবাইল ফোন, সিমকার্ড বিহীন একটি কালো রঙের পুরাতন ভাঙা ওয়ালটন মোবাইল ফোন, একটি সোনালী রঙের সিম্ফোনি এক্সপ্লোরার (মডেল- ভি ৮৫) ফোন উদ্ধার করা হয়। এছাড়া কালিমাতুশ শাহাদাহ, সত্য কথন, প্রত্যাবর্তন, সংবিৎ, বৃষ্টি মুখর রৌদ্র মুখর, মুক্ত বাতাসের খোঁজে, তোমাকে বলছি হে যুবক, সুখময় জীবনের সন্ধানে, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ, খুশূ খুযূ, সবুজ পাতার বন নামক বইগুলো জব্দ করা হয়।

সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে ওয়েবসাইট অ্যান্ড ইমেইল ক্রাইম টিম জানতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টার্গেট কিলিং ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ  স্থাপনায় বোমা হামলা করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশে গ্রেফতাররা নিউ জেএমবির ঢাকা এলাকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে অভিযান চালিয়ে আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দু’জন পালিয়ে যায়। গ্রেফতার আল আমিন নিউ জেএমবির সিলেট এলাকার আঞ্চলিক কমান্ডার। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া অন্য দুজন ঢাকা অঞ্চলের নেতা ছিলেন।

সূত্র আরো জানিয়েছে, ডিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন জানায়, সে তন্ময় বকশী (ফেসবুকে আগে এটি নয়ন চ্যাটার্জি ছিল) নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও আক্রমণাত্মক লেখা পোস্ট করত।  সে সাইফ ওরফে বাবুল নামে একজনের হাত ধরে ২০১৫ সালে জঙ্গি কার্যক্রমে সস্পৃক্ত হয়। বাবুলের মাধ্যেমে সে ‍উসামা ওরফে তাসকিনের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং পরে তার সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই সময় বাবুল ও তাসকিনের মাধ্যমে সে জঙ্গি আব্দুস সালাম, ফয়জুল্লাহ ও মিলাদের সঙ্গে পরিচিত হয়। তারা সমন্বিতভাবে বিভিন্ন নাশকতা কার্যক্রমের কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা পরে বাস্তবায়ন করে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা ম্যাসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, থ্রিমা অ্যাপস ব্যবহার করত। 

এছাড়া গ্রেফতার আল আমিন পুলিশকে জানিয়েছে, উসামা ওরফে তাসকিন এবং সাইফ ওরফে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আ. সালাম, ফয়জুল্লাহ, মিলাদের সঙ্গে নিউ জেএমবির কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

গ্রেফতার অপরজন শেখ গোলাম হোসেন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার কাথা স্বীকার করে জানিয়েছে. বর্তমানে মো. আল আমিনের নেতৃত্বে সে সহ আব্দুস সালাম ও ফয়জুল্লাহ জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার(এডিসি) নাজমুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শুক্রবার যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।