ব্রেকিং:
চার বছর পর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গে প্রবাসীর মৃত্যু! লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগী ৩৭ জন : নতুন করে শিশুসহ আক্রান্ত ৩ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের মারা যাওয়া তরুণের করোনা নেগেটিভ, তিন ভাই বোনের পজেটিভ লক্ষ্মীপুরে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল এডভোকেট নয়ন লক্ষ্মীপুরে ত্রাণের সাথে ঘরও পেল লুজি মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ সুপারের ভিডিও কনফারেন্স লক্ষ্মীপুরে আরো ৩ জনের করোনা পজেটিভ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? লক্ষ্মীপুরে ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ লক্ষ্মীপুরে ২০০০ পরিবার পেল উপহার সামগ্রী
  • বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

সূরা বাকারা: ১৪৬-১৭৭ নম্বর আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট ও ঘটনা

আলোকিত লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯  

আমরা এখানে সূরা বাকারার ১৪৬-১৭৭ নম্বর আয়াতসমূহের উল্লেখযোগ্য শানে নুযুল (আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট) তুলে ধরছি-

الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ وَإِنَّ فَرِيقاً مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ৬.
অর্থ : আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তাকে সেরূপ জানে যেরূপ তারা নিজের সন্তানদেরকে চিনে। জেনে রেখো! তাদের একদল জেনে শুনে সত্য গোপন করে থাকে। (আয়াত: ১৪৬)।

শানে নুযুল : মদিনায় হিজরতের পর যখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে নামাজ পড়তে থাকেন, তখন মদিনার ইহুদিরা বলতে থাকে, ইনি নিজেকে শেষ নবী দাবি করেন এবং কাবা শরিফের পরিবর্তে এখন বায়তুল মাকদিসকে কেবলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাই আমাদের দ্বীন যে সত্য তা প্রমাণিত হলো। আর সে জন্যই তিনি একটু একটু করে আমাদের ধর্মের দিকে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু যখণ নবীজী আবার কাবা শরিফের দিকে ফিরে নামাজ পড়তে শুরু করেন, তখন তারা নানা রকম কটুকাটব্য করতে থাকে। এমন কথা-বার্তা বলতে থাকে যেন তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কিছু জানেই না। অথচ তাওরাত ও ইনজিলে নবীজীর (সা.) যাবতীয় বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে, এমনকী কেবলা পরিবর্তনের কথাও বিবৃত হয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালা উল্লেখিত আয়াত নাজিল করে তাদের চরিত্র সুস্পষ্টভাবে চিত্রায়িত করে দিলেন যে, তারা নবীজীকে (সা.) নিজ সন্তানের ন্যায় পরিষ্কারভাবে চিনে, কিন্তু তথাপি না চেনার ভান করে সত্যকে গোপন রাখে।

وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ
অর্থ : আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদের মৃত বলো না বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। (আয়াত : ১৫৪)।

শানে নুযুল : মুফাসসিরীনে কেরাম লেখেন যে, এই আয়াতটি বদরে যুদ্ধে শহীদ তামীম ইবনে হাম্মার ও অন্যান্য সাহাবীদের সম্পর্কে নাজিল হয়। তাতে আনসার ছিল ৮ জন, মুহাজির ৬ জন তখন শত্রæরা বলতে লাগল তারা কত নির্বোধ।

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللهِ
অর্থ : নি:সন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ বা ওমরাহ পালন করে তাদের পক্ষে এ দু’টিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে তবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই অবগত হন। এবং তার সে আমলের সঠিক মূল্য দেবেন। (আয়াত-১৫৮)।

শানে নুযুল : এই আয়াতটির শানে নুযুল সম্পর্কে মুফাসসিরীনরা লেখেন, জাহেলিয়াত এর যুগে এই পাহাড় দু’টির ওপর দু’টি মূর্তি ছিল। তাই মুশরিকরা মূর্তি পূজার উদ্দেশ্য এই দু’টি পাহাড় প্রদক্ষিণ করত। তাই মুসলমানরা পরবর্তীতে এই পাহাড় দু’টিকে প্রদক্ষিণ করতে মন্দ মনে করত। তাদের ব্যাপারেই এই আয়াতটি নাজিল হয়।

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ.
অর্থ : নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচল মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা আকাশ থেকে যে পানি নাজিল করেছেন তা দ্বারা মৃত জমিনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব রকম জীবজন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালায় যা তারই হুকুমের অধীনে আসমান জমিনের মাঝে বিচরণ করে নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য। (আয়াত: ১৬৪)।

শানে নুযুল : মুফাসসিরীনে কেরাম লেখেন, যখন ওপরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালার একাত্ব বর্ণনা করা হলো, তখন মুশরিকরা বিস্ময় হয়ে বলতে লাগল মাবুদ মাত্র একজন? তাহলে আপনি আপনার মাবুদের একত্ববাদের দলীল নিয়ে আসুন। তখনই এই আয়াত নাজিল হয়।

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاء مِن مَّاء فَأَحْيَا بِهِ الأرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ.

শানে নুযূল : যখন পূর্ববর্তী আয়াত وَاِلَهُكُمْ اِلَهٌ وَّاحِدٌ নাজিল করা হয়, তখন কাফেররা বলতে শুরু করে, এত বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের জন্য এক ইলাহ, কীভাবে তা সম্ভব? নিশ্চয় আরো ইলাহ রয়েছে। তখন মহান আল্লাহ ক্ষমতায় সার্বভৌমত্ব ও একত্ব প্রকাশ করতে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন।

কুরাইশরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নিদর্শন দাবি করত। তারা বলত, যদি এই কাজটি করতে পারেন, তাহলে করে দেখান। কিন্তু তা দেখানোর পর তারা সেটিকে জাদু বা ইত্যাকার কোনো শব্দ দ্বারা বিশেষিত করত, কিন্তু ঈমান আনত না। যেমন, একবার এক কুরাইশী যুবক এসে নবীজীকে বলে, আপনি যদি সাফা পাহাড়টিকে স্বর্ণের দ্বারা পরিবর্তন করে দিতে পারেন তাহলে আমাদের দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে। তখন আমরা আপনাকে নবী মেনে নিতে কোনো দ্বিধা করব না। শুনে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট এ মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আদায় করলেন। এরপর নবীজীর দোয়ার প্রেক্ষিতে হজরত জিবরাঈল (আ.) এসে হুজুরের সমীপে উপস্থিত হন এবং বলেন, আপনার পক্ষ থেকে এ মুজিযা দেখাবার পরও তারা ঈমান আনবে না। আর আল্লাহর নিয়ম হলো, মুজিযা দেখানোর পরও তারা ঈমান আনবে না। আর আল্লাহর নিয়ম হলো, মুজিযা দেখানোর পরও যদি ঈমান না আনে, তাহলে তিনি কাফেরদের নির্মূল করে দেন। সেই নিয়মে তিনি আপনার উম্মতকেও নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। এ কথা শুনে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁপে উঠলেন এবং বললেন, তাদের কাক্সিক্ষত মুজিযা দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই; বরং আমি দাওয়াত দিতে থাকব, হয়তো তাতেই তারা ঈমান আনতে থাকবে। তখন এই আয়াত নাজিল হয়। তাতে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে যে সকল বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে, সত্যান্বেষীদের জন্য তাই কি কম? তাই কি যথেষ্ট নয়? অবশ্যই যথেষ্ট ও অধিক।
(ইবনে কাসীর)।

يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ.
অর্থ : হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও রুচি সম্মত তা খাও। শয়তানের অনুসরণ করো না। নিশ্চিত জেনে রাখ, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। (আয়াত-১৬৮)।

শানে নুযূল : হজরত ইবনে আব্বাস এবং ইবনে জারীর হতে বর্ণিত। এই সমস্ত আয়াত ছকীফ, খাযা’আ, আমের ইবনে ছা’ছা ও অন্যান্য আরব কাফেরদের প্রসঙ্গে অবতীণ হয়েছে, যারা ষাঁড় ও অন্যান্যের গোশত হারাম মনে করত। (ইবনে জারীর, রুহুল মাআনী)।

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللهُ قَالُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لاَ يَعْقِلُونَ شَيْئاً وَلاَ يَهْتَدُونَ.
অর্থ : যখন তাদেরকে (কাফেরদেরকে) বলা হয়, সে কালামের অনুসরণ কর যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। তখন তারা বলে, ‘না, আমরা তো সে সবের অনুসরণ করি যা আমাদের বাপ-দাদার সূত্রে পেয়েছি।’ এমন কী, তাদের পিতৃ-পুরুষগণ যদিও কিছুই বুঝত না এবং তারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না, তথাপিও। (আয়াত-১৭০)।

শানে নুযূল : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের প্রতি ঈমান গ্রহণের আহ্বান জানালে ইহুদিদের মধ্য হতে রাফে ইবনে হারমালা এবং মালেক ইবনে আউফ বলেন, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের পথেই চলব, তাদের পথ আমরা কখনো ছাড়তে পারব না। তাদের প্রসঙ্গে উল্লিখিত আয়াত অবতীর্ণ হয়। (রুহুল মানী)।

অথবা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার মুশরিকদের তাদের পিতৃপুরুষদের অবৈধ রীতি-নীতি ত্যাগ করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণের আহ্বান জানালে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমরা ওই পথেই চলব, যে পথে আমাদের বাপ-দাদাগণ চলতেন, তখন তাদের প্রসঙ্গে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। (বায়যাবী)।

إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلاَ عَادٍ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.
অর্থ : কিন্তু আল্লাহ তোমাদের জন্য মৃত জন্তু, রক্ত ও শুকর হারাম করেছেন আর সেসব প্রাণী যাদের ওপর আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে। হ্যাঁ, যদি কোনো ব্যক্তি অনোন্যপায় অবস্থায় (এসব থেকে ভক্ষণ করে) যখন তার উদ্দেশ্য স্বাদ গ্রহণ করা নয় এবং যদি না সে প্রয়োজনের (অতিরিক্ত) গ্রহণ করে, তবে তার কোনো পাপ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান। (আয়াত-১৭৩)।

শানে নুযূল : হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, জাহিলি যুগে আরবের লোকেরা বহু হালাল জিনিসকে হারামমনে করত এবং বহু হারাম বস্তু ভক্ষণ করত, মৃত প্রাণীর গোশত, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত ইত্যাদি ভক্ষণ করত। ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে মুসলমানরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাদ্যে বৈধতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তাদের সে বর্বরোচিত কু-সংস্কারের অপনোদনে আল্লাহ তায়ালা অত্র আয়াত অবতীর্ণ করেন।

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللهُ مِنَ
অর্থ : নিশ্চয়ই যারা সেসব বিষয় গোপন করে যা আল্লাহ কিতাবে নাজিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে না কথা বলবে না তাদের পবিত্র করা হবে। বস্তুত তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। (আয়াত-১৭৪)।

শানে নুযুল : এই আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে, আয়াতটি ইহুদী সম্প্রদায় ও তাদের ওলামাদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। যারা জনসাধারণ থেকে হাদিয়া তোহফা গ্রহণ করত এবং তাদের ধারণা ছিল মুহাম্মাদ (সা.) তাদেরই বংশ থেকে আবির্ভূত হবেন। কিন্তু যখন হুজুর (সা.) তাদের বংশ থেকে আবির্ভূত হলেন না তখন তাদের হাদিয়া তোহফা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিল। তাই তারা তাদের কিতাবে বর্ণিত রাসূল (সা.) এর গুণাবলীকে বিকৃত করে জনসাধারণের সামনে পেশ করতে লাগল। এবং বলতে লাগল আমাদের কিতাবে যে রাসূলের বর্ণনা আছে তিনি সে রাসূল নন। কারণ আমাদের বর্ণিত গুণাবলীর সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। তখন আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাজিল করেন।

لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّآئِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُواْ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاء والضَّرَّاء وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ.
অর্থ : পুণ্য তো শুধু এই নয় যে, নিজের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম মুখী করবে। পুণ্য হলো, লোকেরা আল্লাহর ওপর, শেষ দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, আল্লাহ তায়ালার কিতাবসমূহের ওপর আর তার নবীদের ওপর ঈমান আনবে। আল্লাহর ভালোবাসায় নিজের সম্পদ আত্মীয়দেরকে, ইয়াতীমদেরকে, মুসাফিরকে এবং ভিক্ষুককে দান করবে, গোলামদের আজাদ করতে ব্যয় করবে। নামাজ কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে। যখন অঙ্গীকার করবে, তা পূর্ণ করতে অভ্যস্ত হবে। আর দু:খে ও কষ্টে বিশেষত যুদ্ধের সময় ধৈর্য ও দৃঢ়তা অবলম্বন করবে। এরা সেই লোক যারা সাচ্চা, এরা সেই লোক যারা মুত্তাকী। (আয়াত-১৭৭)।

শানে নুযুল : আলোচ্য আয়াত ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়েছে। খ্রিস্টানরা পূর্বমুখী হয়ে নামাজ আদায় করত এবং ইহুদিরা পশ্চিমমুখী অর্থাৎ বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায় করত। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ কেবলা নিয়ে গর্ব করত এবং কেবলার মধ্যেই সকল কল্যাণ নিহিত রয়েছে বলে মনে করত। তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা খন্ডন করে প্রকৃত কল্যাণের পথ নির্দেশেরে লক্ষ্যে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

আলোকিত লক্ষ্মীপুর
আলোকিত লক্ষ্মীপুর
//